ঢাকা, এপ্রিল ১৬ - শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যিনি সাড়ে চার মাস আগে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তার আগে পদত্যাগপত্র দেন তানজীম আহমেদ (সোহেল তাজ)।
ব্যক্তিগত সহকারীর ‘অর্থ কেলেঙ্কারির’ জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার মধ্যে থাকা সুরঞ্জিত সোমবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
গত ৯ এপ্রিল রাতে এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার এবং রেলের দুই কর্মকর্তাকে বহনকারী গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার পর থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে সুরঞ্জিতের পদত্যাগের দাবি ওঠে।
প্রচার মাধ্যমে সবসময় সাবলীল সুরঞ্জিত শুরু থেকে এই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে এলেও রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে বৈঠকের পরদিন রেলভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনেও এই ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে সুরঞ্জিত বলেন, “ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকার পরও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে আমি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলাম।”
শেখ হাসিনা সরকারের প্রায় তিন বছর পার হওয়ার পর মন্ত্রিসভায় শপথ নেন সুরঞ্জিত, দায়িত্ব পান নতুন মন্ত্রণালয় রেলের।
এপিএসের কেলেঙ্কারির পর সুরঞ্জিতের পদত্যাগ দাবি বেশ জোরেশোরেই ওঠে। বিএনপির সংসদীয় দল রোববারও সংবাদ সম্মেলন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। দাবি ওঠে অন্য দলগুলো থেকেও।
পদত্যাগের দাবি তোলার ক্ষেত্রে সবার যুক্তি ছিল, সুরঞ্জিত দায়িত্বে থেকে গেলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সুরঞ্জিতও বলেন, এই প্রশ্ন ওঠার কারণে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সুরঞ্জিতের আগে সুনির্দিষ্ট কারণে বর্তমান মন্ত্রিসভার আরো যে সদস্যের পদত্যাগের দাবি জোরালোভাবে ওঠে, তারা হলেন- সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাহারা খাতুন।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতি এবং বেহাল মহাসড়কের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আবুল হোসেনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। পরে অবশ্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যাকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পদত্যাগ দাবি ওঠে সাংবাদিকদের মধ্য থেকেও।
এই দুজন ছাড়া পুঁজিবাজারে অস্থিরতার জন্য বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি সংসদেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি ওঠে।
তবে সুরঞ্জিতের আগে শুধু পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রায় তিন বছর আগে দেওয়া তার পদত্যাগপত্র অবশ্য এখনো গৃহীত হওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
মন্ত্রিসভার তালিকায় তানজীমের নাম এখনো থাকলেও এই সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রীর কোনো সুযোগ-সুবিধাই নিচ্ছেন না।
নবম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, গঠন করেন ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এরপর তিন দফায় মন্ত্রিসভায় যোগ হন ১৪ জন। এর মধ্যে সুরঞ্জিতকে নিয়ে পদত্যাগকারী সংখ্যা দুজন।
শেখ হাসিনার এই সরকারে পদত্যাগের ঘটনা আর না ঘটলেও ১৯৯৬ সালের সরকারে একটি ঘটেছিল। ওই সময় যিনি পদত্যাগ করেছিলেন সেই আফসার উদ্দিন এই সরকারের পদত্যাগী তানজীমের চাচা।
ভাষানটেক বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে জটিলতায় তখন পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আফসার উদ্দিন।
আওয়ামী লীগের সরকারের এর বহু আগে পদত্যাগের ঘটনায়ও জড়িয়ে রয়েছে তানজীমের পরিবার। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম কাণ্ডারী তাজউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর তাজউদ্দিনের তখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দিনের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়াকে দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখেন বিশ্লেষকরা।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় তাজউদ্দিন ছাড়াও পদত্যাগ করেছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। এই রাজনীতিক জাতীয় পার্টির সময় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে অবশ্য পুরনো দল আওয়ামী লীগে ফেরেন তিনি।
কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পদত্যাগের ঘটনা ২০০১ সালের খালেদা জিয়ার সরকারেও ঘটেছিল। নাইকো থেকে গাড়ি নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তখন পদত্যাগ করতে হয়েছিল তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে।
তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে জটিলতায় ওই সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও পদত্যাগ করেছিলেন।
এছাড়া ২০০১ সালের সরকারে দীর্ঘদিন দপ্তরবিহীন থাকার পর পদত্যাগ করেছিলেন হারুনুর রশীদ খান মুন্নু।
১৯৯১ সালের খালেদা জিয়ার সরকারে পদত্যাগ করেছিলেন দুজন, তারা হলেন জহিরউদ্দিন খান ও শামসুল ইসলাম খান।
এছাড়া জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকার আমলে মন্ত্রিসভায় আসা-যাওয়ার ঘটনা অনেক ঘটেছে। |
|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন