সাক্ষাৎকার
পদ্মা সেতু: বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন এখনো সম্ভব |
||||
|
||||
ঢাকা, এপ্রিল ০৭ -পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে মালয়শিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামোতে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে দাতাদের অর্থায়নের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “পদ্ম সেতু নির্মাণের ব্যাপারে মালয়শিয়া সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ১০ এপ্রিল এমওইউ স্বাক্ষর হতে পারে। কিন্তু মালয়শিয়ার সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর হলেই যে বিশ্ব ব্যাংক বা অন্য দাতাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।”
দুপুরে অর্থমন্ত্রণালয়ে নিজের কক্ষে বসে মুহিত বলেন, “কোনো কিছুর জন্য এমওইউ স্বাক্ষর মানে দুপক্ষের আগ্রহ প্রকাশ মাত্র। এরপরও অনেক ধাপ থাকে। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে তারা (মালয়শিয়া) কী করতে চয়। আমরা কী চাই। তার কোনো কিছুই ঠিক হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আমরা (সরকার) বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করব কেন।”
পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে মালয়শিয়া কতো টাকা দেবে তারই তো কোনো কিছু এখনও ঠিক হয়নি। এ অবস্থায় আমরা বিশ্ব ব্যাংকের চুক্তি বাতিল করতে যাব কেন?”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “মালয়শিয়ার সঙ্গে এমওইউ হচ্ছে, হোক। বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ঝুলে থাকা বিষয়টির জট খোলার ব্যাপারেও আলোচনা আমরা চালিয়ে যাব। সঠিক সময়ে যে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে সেটাই আমরা নেব।”
এদিকে এমওইউ স্বাক্ষর করতে রোববার রাতে মালয়শিয়া যাচ্ছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এর আগে মালয়শিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ২১ ফেব্রুয়ারি এমওইউ স্বাক্ষর হবে।
ইতিমধ্যে মালয়শিয়া সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির বাসভবনে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ঔনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “রোববার আমি মালয়শিয়া যাচ্ছি। সেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে এমওইউ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে ইনশাল্লাহ।”
“তবে এটা চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ,” বলেন ওবায়দুল কাদের।
২৯০ কোটি ডলারের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও পরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিত করে।
বিশ্ব ব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের এ অভিযোগের তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
দুদকের তদন্তে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি; তবে অভিযোগের কয়েক মাস পর আবুল হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে থাকা প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকার কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের একটি ইউনিটের বিশ্ব ব্যাংকের কোনো প্রকল্পে অংশগ্রহণের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে গত সপ্তাহে।
বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করার পর মালয়শিয়া এ সেতু নির্মাণে আগ্রহ দেখায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে মালয়শিয়া সরকারের বিশেষ দূত এইচ ই দাতো সেরি এস সামি ভেলি নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পদ্মা সেতু নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মালয়শিয়ার সহায়তাতেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আভাস দিয়েছেন বলে কয়েকটি পত্রপত্রিকায় খবর বের হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন