সাগর-রুনি হত্যা ডাকাতি ও শত্রুতা ধরে তদন্ত করছে পুলিশ
|
|
|
Tue, Apr 17th, 2012 8:41 pm BdST
|
|
|
ঢাকা,
এপ্রিল ১৭- সাংবাদিক দম্পতি হত্যার পরপরই
‘পূর্বপরিকল্পিত’ ঘটনার কথা বললেও ডাকাতি ও ব্যক্তিগত শত্রুতাকে ভিত্তি ধরে
তদন্ত করছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের দুইমাস পর আদালতের বাধ্যবাধকতায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে পুলিশ তাদের এই সন্দেহের কথা প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার
সকালে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের
বেঞ্চে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আলতাফ
হোসেন।
গত ২১ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে এবং ২২ মার্চ
পুলিশ মহাপরিদর্শক পক্ষ থেকে এই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম
আলতাফ হোসেনের কার্যালয়ে ‘অগ্রগতি প্রতিবেদন’ দুটি জমা পড়েছিল।
তবে উভয় প্রতিবেদনই ‘অভিন্ন’ বলে জানিয়েছেন আলতাফ হোসেন।
মামলার
তদন্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলামের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দুটি
বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে; প্রথমত সংঘবদ্ধ
কোনো ডাকাতদল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা এবং দ্বিতীয়ত সাগর-রুনির ব্যক্তিগত,
পারিবারিক বা পেশাগত শত্র“তায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা।’
গত
১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন
মাছারাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার
সাংবাদিক মেহেরুন রুনি।
ওই দিনই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামি ধরার প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
পরে
‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা
হলেও এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। মামলাটি এখন গোয়েন্দা পুলিশ
(ডিবি) তদন্ত করছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলা নগর থানায়
রুনির ভাইয়ের করা একটি আবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ওই বাড়ি
থেকে ঘটনার পর রুনির ব্যবহৃত ১০/১১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ১১০০ ইউরো, দুটি
ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায় নাই। এ ছাড়া নগদ কোন অর্থও পাওয়া যায়
নাই, যা পাওয়া স্বাভাবিক ছিলো।’
এ জন্য বাড়িটির দারোয়ান,
কেয়ারটেকার, গৃহকর্মী, ওই ভবনের বাসিন্দা, বাড়ির মালিক, সম্ভাব্য অতিথি,
ভবনের আশেপাশের বাসিন্দা, সাগর ও রুনির কর্মস্থলের সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব
সবার জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বাদীর
পরবর্তী সম্পূরক বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে
প্রতিবেদনে বলা হয়, পেশাদার অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করে জড়িত থাকার ব্যাপারে
সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে।
প্রতিবেদনে
বলা হয়, ‘এ ব্যাপারে গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অপরাধ উদঘাটনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আসামি
গ্রেপ্তারসহ মামলার রহস্য উদঘাটনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
আলামত উদ্ধার প্রতিবেদনে
ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার প্রসঙ্গে বলা হয়, ১৯টি আলামত জব্ধ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে, একটি লোহার তৈরি বটি, একটি স্টিলের ছুরি, একটি ছুটির বাট,
একটি বেগুনি রঙের কামিজ ও একটি সিনথেটিক কালো রঙের কামিজ, যেগুলো রক্তমাখা
অবস্থায় ছিলো।
এ ছাড়া দরজার ভাঙা একটি তালাও উদ্ধার করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ময়নাতদন্তকারী
চিকিৎসক সোহেল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত
রক্তক্ষরণে সাগর ও রুনির মৃত্যু হয়েছে। রুনির ক্ষেত্রে ধর্ষণের (সেক্সুয়াল
ইন্টাকোর্স) চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদীর প্রতিক্রিয়া
রুনির
ভাই নওশের রোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রগতি প্রতিবেদন
নিয়ে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করায় এই মামলার ভবিষ্যত নিয়ে আমাদের হতাশা আরো
বাড়ল।”
প্রকৃত ঘটনা কোনোদিনই উদঘাটন হবে না- এমন আশঙ্কা করছেন তিনি।